ওরাই প্রমাণ করছে শেখ কামালের নিষ্কলঙ্কতা

MS ISLAM _ BDTutorials2
0



শুচিতা মোর চির সাথী,
সত্য আমার অলঙ্কার।
লাথি মারি মিথ্যার মুখে,
আঘাত করি বারংবার।

মিথ্যা আর গুজবে একদিন,
করেছিল বাংলা গ্রাস।
এসেছে আজ সত্যের জয়,
ভণ্ডদের আজ সর্বনাশ।

সত্য পথের পথিক যারা,
কে কোথায় আছিস তোরা?
সত্যের মালা পর গলে
মিথ্যুকরা আজ রসাতলে।

বঁচকরা আজ দিশেহারা,
যা খুশি তাই বলছে ওরা।
ওদের কথায় ওরা ধরা,
তাইতো সত্য পাগল পারা।

সত্যের ছন্দ দিয়ে শুরু করলাম। আজকের এই ডিজিটাল যুগে সত্যের জয়জয়কার। মিথ্যাবাদীদের মুখ আজ বিষাদে ভরে গেছে। ছোটবেলা থেকে একটি বিষয় আমার মনে ভীষণ পীড়া দিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছেলেরা নাকি ব্যাংক ডাকাতি  এবং মেজর ডালিমের বৌ অপহরণ করেছিল। শৈশবের থেকেই বিষয়টা আমার মেনে নিতে কষ্ট হতো, কারন যে মানুষটা এই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার জীবন-যৌবন ত্যাগ করেছেন, সেই মানুষের সন্তানেরা এমন কলুষিত কাজ কেমন করে করতে পারে? আমার পরিবার থেকেও এর সদুত্তর পাওয়ার কোন উপায় ছিল না, কারণ তারাও তেমন সচেতন নয়। গুজবটাকেই তারা বিশ্বাস করতেন।

আমি সুন্দর নই তাই আমি সুন্দরের পূজারী, আমি শিক্ষিত নই বললেই চলে তাই আমি শিক্ষিতিতের পূজারী, মিথ্যার আশেপাশেই আমি বড় হয়েছি তাই আমি সত্যের পূজারী। সত্য আমার চির আকাঙ্ক্ষার বিষয়। সত্যের সন্ধান আমার চিরকালই অব্যাহত থাকবে। যারা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে এবং তাঁর পরিবারকে মিথ্যার তিলক এঁকে দিয়েছিল তারাই আজকে মনের গোচরে এবং অগোচরে সত্য প্রকাশ করে দিচ্ছে। তেমনি একটি সত্য আজকে আমার আলোচনায় তুলে ধরবো। যদিও অনেকে জানেন তবু ব্যপকভাবে প্রচার এবং প্রসারের জন্য যে টপিকস আমি আবার তুলে ধরছি তাহলো_ওরাই প্রমাণ করছে শেখ কামালের নিষ্কলঙ্কতা।

মুল প্রসঙ্গ হল শেখ কামাল নাকি ব্যাংক ডাকাতি এবং মেজর ডালিমের বৌ অপহরণ করেছিল। প্রথমেই আসি_

ব্যাংক ডাকাতি প্রসঙ্গঃ  
মেজর জেনারেল মইনের এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য : স্বাধীনতার প্রথম দশক বইটিতে (পৃষ্ঠা ৬৫-৬৬) উনি লিখেছেন, ১৯৭৩ সালের বিজয় দিবসের আগের রাতে ঢাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, সিরাজ শিকদার তার দলবল নিয়ে এসে শহরের বিভিন্নস্থানে হামলা চালাতে পারেনএ অবস্থায় সাদা পোশাকে পুলিশ গাড়ি নিয়ে শহরজুড়ে টহল দিতে থাকেসর্বহারা পার্টির লোকজনের খোঁজে শেখ কামালও তার বন্ধুদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ধানমন্ডি এলাকায় বের হনসিরাজ শিকদারের খোঁজে টহলরত পুলিশ মাইক্রোবাসটি দেখতে পায় এবং আতংকিত হয়ে কোনো সতর্ক সংকেত না দিয়েই গুলি চালায়শেখ কামাল ও তার বন্ধুরা গুলিবিদ্ধ হনগুলি শেখ কামালের কাঁধে লাগেতাকে তখনকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়
প্যারেড শেষে মইন পিজিতে যান শেখ কামালকে দেখতেহাসপাতালে বেগম মুজিব শেখ কামালের পাশে বসেছিলেনমইন লিখেন, প্রধানমন্ত্রী তার ছেলের ওই রাতের অবাঞ্ছিত ঘোরাফেরায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং শেখ কামালকে হাসপাতালে দেখতে যেতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানানপরে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে যান
জেনারেল মইন এখানে লিখেন, “এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষীরা এই ঘটনাকে ভিন্নরূপে প্রচার করেব্যাংক ডাকাতিকরতে গিয়ে কামাল পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে তারা প্রচারণা চালায় এবং দেশ-বিদেশে ভুল তথ্য ছড়াতে থাকেযদিও এসব প্রচারণায় সত্যের লেশমাত্র ছিল না

এছাড়াও এই কথার স্বপক্ষে চার জন স্বাক্ষী রাখলাম কারো যদি আমার কথায় সন্দেহ হয়, দয়াকরে এই চার জনকে জিজ্ঞাসা করলে আমার কথার সত্যতা পাওয়া যাবে
চারজন হলেন-

০১/ তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহাবুব আলম (বীরবিক্রম)  যাকে এক নামে সবাই এসপি মাহবুব নামে চিনেযার নেতৃত্বে সেদিন পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের ধরতে এসেছিল
০২/ সেই সময়কার দৈনিক মর্নিং নিউজএর সম্পাদক প্রবীন সাংবাদিক এ.বি.এম মুসাযিনি ঘটনার পরদিন পত্রিকায় সত্য ঘটনাটি তুলে ধরেছিলন (বর্তমানে নেই)
০৩/ র্তমানে বিএনপির নেতা ইকবাল হাছান টুকুযে জিপটিতে কামালরা দুষ্কৃতকারীদের ধরতে গিয়েছিলেন সেটা ছিল টুকুর এবং সেদিন জিপটি টুকুই ড্রাইভ করেছিলেন
তৃতিয় স্বাক্ষী নিয়ে একটা কথা: গত কিছু আগে খালেদা জিয়া ঢাকার এক জনসভায় ভাষনে আ:লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন ‘’ব্যাংক ডাকাতিতো তাদের রক্তে মিশে আছেম্যাডাম আর কত মিথ্যা বলবেন? একটু নিজের দলে বিএনপির নেতা ইকবাল হাছান টুকুর কাছে খোজ নেন সত্যটা আপনার চোখের সামনে প্রতিনিয়ত

০৪/  জাপা'র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদযিনি কামালদের সিনিয়র হলেও, কামালদের সাথে প্রায় বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন এবং সেদিন তিনিও ঐ জিপে ছিলেন







এবার আসি_

মেজর ডালিমের বউ অপহরণ প্রসঙ্গঃ
মেজর ডালিমের স্ত্রী অপহরণের কথা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং অপপ্রচার করা হয়,  অথচ তার লেখা যা দেখেছি, যা বুঝেছি যা করেছিবইয়ে লেখা আছে রেডক্রসের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলেদের সাথে ডালিমের স্ত্রী নিম্মির ভুল বোঝাবুঝি সামরিক বেসামরিক বহু ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু মীমাংসা করে দেন
শেখ কামালের সাদামাটা জীবন নিয়ে নাট্য ব্যক্তিত্ব ডলি জহুর স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, “১৯৭৩-৭৪ সালে ঢাকা শহরে রাত ১০ টা মানেই অনেক রাতরাস্তা একেবারেই ফাঁকাকামাল ভাই আমাকে ১১টা-১২টার দিকে বাসায় পৌছে দিতেনপ্রেসিডেণ্টের ছেলে হয়েও তার কাছে সবসময় টাকা থাকত নাএ নিয়ে অনেক ক্ষ্যাপাতামশুধু আমি না ক্যাম্পাসেও তার বন্ধুরা তাকে এই জন্য ক্ষ্যাপাতযেদিন কামাল ভাইয়ের কাছে টাকা থাকত না সেদিন রাতে হেঁটে যেতামযেদিন টাকা থাকত সেদিন যেতাম রিকশায়কত রাতের পরে রাত উনার সাথে আমি একা বাসায় ফিরেছি অথচ একবারের জন্যও আমি তাকে আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে দেখিনি ( তথ্যঃ dailyjanatarnews.com_ লিঙ্ক )

মেজর ডালিমের স্ত্রী অপহরণের বিষয়টি তার লেখা যা দেখেছি, যা বুঝেছি যা করেছি বই থেকে তুলে ধরা হলোঃ
আমার স্ত্রী এবং আমি গাজী গোলাম মোস্তফা কর্তৃক অপহরিত হই_
রেডক্রস চেয়ারম্যান এবং তদানীন্তন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ প্রধান গাজী গোলাম মোস্তফা নিম্মী এবং আমাকে বন্দুকের মুখে লেডিস ক্লাব থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়
১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি ঘটে এক বর্বরোচিত অকল্পনীয় ঘটনাদুস্কৃতিকারী দমন অভিযানে সেনাবাহিনী তখনও সারাদেশে নিয়োজিতআমার খালাতো বোন তাহ্‌মিনার বিয়ে ঠিক হল কর্নেল রেজার সাথেদুপক্ষই আমার বিশেষ ঘনিষ্টতাই সব ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে হচ্ছিল আমাকে এবং নিম্মীকেইবিয়ের দুদিন আগে ঢাকায় এলাম কুমিল্লা থেকেঢাকা লেডিস ক্লাবে বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছেসেই বিয়েতে অনেক গন্যমান্য সামরিক এবং বেসামরিক লোকজন বিশেষ করে হোমরা-চোমরারা এসেছিলেন অতিথি হিসেবেপুরো অনুষ্ঠানটাই তদারক করতে হচ্ছিল নিম্মী এবং আমাকেইআমার শ্যালক বাপ্পি ছুটিতে এসেছে ক্যানাডা থেকেবিয়েতে সেও উপস্থিতবিয়ের কাজ সুষ্ঠভাবেই এগিয়ে চলেছেরেডক্রস চ্যেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার পরিবারও উপস্থিত রয়েছেন অভ্যাগতদের মধ্যেবাইরের হলে পুরুষদের বসার জায়গায় বাপ্পি বসেছিলতার ঠিক পেছনের সারিতে বসেছিল গাজীর ছেলেরাবয়সে ওরা সবাই কমবয়সী ছেলে-ছোকরাবাপ্পি প্রায় আমার সমবয়সীহঠাৎ করে গাজীর ছেলেরা পেছন থেকে কৌতুকচ্ছলে বাপ্পির মাথার চুল টানে, বাপ্পি পেছনে তাকালে ওরা নির্বাক বসে থাকে এভাবে দু’/তিনবার চুলে টান পড়ার পর বাপ্পি রাগান্বিত হয়ে ওদের জিজ্ঞেস করে,
-
চুল টানছে কে?
-আমরা পরখ করে দেখছিলাম আপনার চুল আসল না পরচুলাজবাব দিল একজনপুচঁকে  ছেলেদের রসিকতায় বাপ্পি যুক্তিসঙ্গত কারণেই ভীষণ ক্ষেপে যায়; কিন্তু কিছুই বলে নামাথা ঘুরিয়ে নিতেই আবার চুলে টান পরেএবার বাপ্পি যে ছেলেটি চুলে টান দিয়েছিল তাকে ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলে,
-বেয়াদপ ছেলে মশকারী করার জায়গা পাওনি? খবরদার তুমি আর ঐ জায়গায় বসতে পারবে নাএ কথার পর বাপ্পি আবার তার জায়গায় ফিরে আসেএ ঘটনার কিছুই আমি জানতাম নাকারণ তখন আমি বিয়ের তদারকি এবং অতিথিদের নিয়ে ভীষণভাবে ব্যস্তবিয়ের আনুষ্ঠিকতার প্রায় সবকিছুই সুষ্ঠভাবেই হয়ে যায়খাওয়া-দাওয়ার পর্বও শেষঅতিথিরা সব ফিরে যাচ্ছেনসেদিন আবার টেলিভিশনে সত্যজিৎ রায়ের পুরষ্কার প্রাপ্ত ছবি মহানগরছবিটি দেখানোর কথা; তাই অনেকেই তাড়াতাড়ি ফিরে যাচ্ছেন ছবিটি দেখার জন্যঅল্প সময়ের মধ্যেই লেডিস ক্লাব প্রায় ফাঁকা হয়ে গেলমাহবুবের আসার কথামানে এসপি মাহবুবআমাদের বিশেষ ঘনিষ্ট বন্ধুদের একজনআমরা সব একইসাথে যুদ্ধ করেছি স্বাধীনতা সংগ্রামেকি এক কাজে মানিকগঞ্জ যেতে হয়েছিল তাকেওখান থেকে খবর পাঠিয়েছে তার ফিরতে একটু দেরী হবেঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজনরা সবেমাত্র তখন খেতে বসেছিহঠাৎ দুটো মাইক্রোবাস এবং একটা কার এসে ঢুকল লেডিস ক্লাবেকার থেকে নামলেন স্বয়ং গাজী গোলাম মোস্তফা আর মাইক্রোবাস দুটো থেকে নামল প্রায় ১০-১২ জন অস্ত্রধারী বেসামরিক ব্যক্তিগাড়ি থেকেই প্রায় চিৎকার করতে করতে বেরুলেন গাজী গোলাম মোস্তফা

-
কোথায় মেজর ডালিম? বেশি বার বেড়েছে তাকে আজ আমি শায়েস্তা করবকোথায় সে? আমি তখন ভেতরে সবার সাথে খাচ্ছিলামকে যেন এসে বলল গাজী এসেছেআমাকে তিনি খুঁজছেনহঠাৎ করে গাজী এসেছেন কি ব্যাপার? ভাবলাম বোধ হয় তার পরিবারকে নিয়ে যেতে এসেছেন তিনিআমি তাকে অর্ভ্যথনা করার জন্য বাইরে এলামবারান্দায় আসতেই ৬-৭জন স্টেনগানধারী আমার বুকে-পিঠে-মাথায় তাদের অস্ত্র ঠেকিয়ে ঘিরে দাড়ালঘটনার আকস্মিকতায় আমিতো হতবাক! কিছুটা অপ্রস্তুতও বটেসামনে এসে দাড়ালেন স্বয়ং গাজীআমি অত্যন্ত ভদ্রভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

-
ব্যাপার কি? এ সমস্ত কিছুর মানেই বা কি?
তিনি তখন ভীষণভাবে ক্ষীপ্তএকনাগাড়ে শুধু বলে চলেছেন,
-গাজীরে চেন নাআমি বঙ্গবন্ধু নাচল্‌ শালারে লইয়া চল্‌আইজ আমি তোরে মজা দেখামুতুই নিজেরে কি মনে করছস?
অশালীনভাবে কথা বলছিলেন তিনিআমি প্রশ্ন করলাম,
-কোথায় কেন নিয়ে যাবেন আমাকে?
আমার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে তিনি নির্দেশ দিলেন তার অস্ত্রধারী অনুচরদেরতার ইশারায় অস্ত্রধারীরা সবাই তখন আমাকে টানা-হেচড়া করে মাইক্রোবাসের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছেবিয়ের উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের বন্দোবস্ত করা হয়েছে; গাড়িতে আমার এস্কট সিপাইরাও রয়েছেঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিতএকটা বিয়ের অনুষ্ঠানকন্যা দান তখনও করা হয়নিকি কারণে যে এমন অদ্ভুত একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হল সেটাই বুঝতে পারছিলাম নাহঠাৎ দেখলাম বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আলম এবং চুল্লুকে মারতে মারতে একটা মাইক্রোবাসে উঠালো ৩-৪ জন অস্ত্রধারীইতিমধ্যে বাইরে হৈ চৈ শুনে নিম্মী এবং খালাম্মা মানে তাহমিনার আম্মা বেরিয়ে এসেছেন অন্দরমহল থেকেখালাম্মা ছুটে এসে গাজীকে বললেন,
-ভাই সাহেব একি করছেন আপনি? ওকে কেন অপদস্ত করছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে? কি দোষ করেছে ও?
গাজী তার কোন কথারই জবাব দিলেন নাতার হুকুমের তামিল হলআমাকে জোর করে ঠেলে উঠান হল মাইক্রোবাসেবাসে উঠে দেখি আলম ও চুল্লু দুজনেই গুরুতরভাবে আহতওদের মাথা এবং মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলআমাকে গাড়িতে তুলতেই খালাম্মা এবং নিম্মী দুজনেই গাজীকে বলল,
-ওদের সাথে আমাদেরকেও নিতে হবে আপনাকেওদের একা নিয়ে যেতে দেব না আমরা
-
ঠিক আছে; তবে তাই হবেবললেন গাজী
গাজীর ইশারায় ওদেরকেও ধাক্কা দিয়ে উঠান হল মাইক্রোবাসেবেচারী খালাম্মা! বয়স্কা মহিলা, আচমকা ধাক্কায় হুমড়ি খেয়ে পড়লেন মাইক্রোবাসের ভিতরেআমার দিকে অস্ত্রতাক করে দাড়িয়ে থাকলো পাঁচজন অস্ত্রধারী; গাজীর সন্ত্রাস বাহিনীর মাস্তান গাজী গিয়ে উঠল তার কারেবাকি মাস্তানদের নিয়ে দ্বিতীয় মাইক্রোবাসটা কোথায় যেন চলে গেলমাইক্রোবাস দুইটি ছিল সাদা রং এর এবং তাদের গায়ে ছিল রেডক্রসের চিহ্ন আঁকা গাজীর গাড়ি চললো আগে আগে আর আমাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি চললো তার পেছনেএসমস্ত ঘটনা যখন ঘটছিল তখন আমার ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হক স্বপন বীর বিক্রম ও বাপ্পি লেডিস ক্লাবে উপস্থিত ছিল নাতারা গিয়েছিল কোন এক অতিথিকে ড্রপ করতেআমাদের কাফেলা লেডিস কা্লব থেকে বেরিয়ে যাবার পর ওরা ফিরে এসে সমস্ত ঘটনা জানতে পারে লিটুর মুখেসবকিছু জানার পরমুহুর্তেই ওরা যোগাযোগ করল রেসকোর্সে আর্মি কন্ট্রোল রুমে তারপর ক্যান্টনমেন্টের এমপি ইউনিটেঢাকা ব্রিগেড মেসেও খবরটা পৌঁছে দিল স্বপন তারপর সে বেরিয়ে গেল ঢাকা শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের খুঁজে বের করার জন্যআবুল খায়ের লিটু আমার ছোট বোন মহুয়ার স্বামী এবং আমার বন্ধুও ছুটে গেল এসপি মাহবুবের বাসায় বেইলী রোডেউদ্দেশ্য মাহবুবের সাহায্যে গাজীকে খুঁজে বের করা
এদিকে আমাদের কাফেলা গিয়ে থামল রমনা থানায়গাজী তার গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল থানার ভিতরেঅল্প কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসলেন গাজীকাফেলা আবার চলতে শুরু করলকাফেলা এবার চলছে সেকেন্ড ক্যাপিটালের দিকেইতিমধ্যে নিম্মী তার শাড়ী ছিড়ে চুল্লু ও আলমের রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য ব্যান্ডেজ বেধে দিয়েছেসেকেন্ড ক্যাপিটালের দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে দেখে আমি চিন্তিত হয়ে পড়লামগাজীর মনে কোন দুরভিসন্ধি নেইতো? রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে নাতো? ওর পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভবকিছু একটা করা উচিতহঠাৎ আমি বলে উঠলাম,
-গাড়ি থামাও!
আমার বলার ধরণে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিলআমাদের গাড়িটা থেমে পড়ায় সামনের গাজীর গাড়িটাও থেমে পড়লআমি তখন অস্ত্রধারী একজনকে লক্ষ্য করে বললাম গাজী সাহেবকে ডেকে আনতেসে আমার কথার পর গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে গাজীকে গিয়ে কিছু বললদেখলাম গাজী নেমে আসছেকাছে এলে আমি তাকে বললাম,
-গাজী সাহেব আপনি আমাদের নিয়ে যাই চিন্তা করে থাকেন না কেন; লেডিস ক্লাব থেকে আমাদের উঠিয়ে আনতে কিন্তু সবাই আপনাকে দেখেছে তাই কোন কিছু করে সেটাকে বেমালুম হজম করে যাওয়া আপনার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হবে না
আমার কথা শুনে কি যেন ভেবে নিয়ে তিনি আবার তার গাড়িতে গিয়ে উঠলেনকাফেলা আবার চলা শুরু করলতবে এবার রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে নয়, গাড়ি ঘুরিয়ে তিনি চললেন ৩২নং ধানমন্ডি প্রধানমন্ত্রীর বাসার দিকেআমরা হাফ ছেড়ে বাচলামকলাবাগান দিয়ে ৩২নং রোডে ঢুকে আমাদের মাইক্রোবাসটা শেখ সাহেবের বাসার গেট থেকে একটু দূরে এলকটা গাছের ছায়ায় থামতে ইশারা করে জনাব গাজী তার গাড়ি নিয়ে সোজা গেট দিয়ে ঢুকে গেলেন ৩২নং এর ভিতরেসেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্ট তখন শেখ সাহেবের বাড়ি পাহারা দিচ্ছেএকবার ভাবলাম ওদের ডাকি, আবার ভাবলাম এর ফলে যদি গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় তবে ক্রস-ফায়ারে বিপদের ঝুঁকি বেশিএ সমস্তই চিন্তা করছিলাম হঠাৎ দেখি লিটুর ঢাকা ক-৩১৫ সাদা টয়োটা কারটা পাশ দিয়ে হুস্‌ করে এগিয়ে গিয়ে শেখ সাহেবের বাসার গেটে গিয়ে থামললিটুই চালাচ্ছিল গাড়িগাড়ি থেকে নামল এসপি মাহবুবনেমেই প্রায় দৌড়ে ভিতরে চলে গেল সে লিটু একটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষায় রইলো সম্ভবত মাহ্বুবের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়লিটু এবং মাহ্বুবকে দেখে আমরা সবাই আস্বস্ত হলামর্নিঘাত বিপদের হাত থেকে পরম করুণাময় আল্লাহ্‌তায়ালা আমাদের বাচিঁয়ে দিলেন
লিটু যখন মাহ্‌বুবের বাসায় গিয়ে পৌঁছে মাহবুব তখন মানিকগঞ্জ থেকে সবেমাত্র ফিরে বিয়েতে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলহঠাৎ লিটুকে হন্তদন্ত হয়ে উপরে আসতে দেখে তার দিকে চাইতেই লিটু বলে উঠল,
-মাহ্বুব ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছেবিয়ে বাড়ি থেকে গাজী বিনা কারণে ডালিম-নিম্মীকে জবরদস্তি গান পয়েন্টে উঠিয়ে নিয়ে গেছে
একথা শুনে মাহবুব স্তম্ভিত হয়ে যায়প্রধানমন্ত্রীকেই খবরটা সবচেয়ে আগে দেওয়া দরকার কোন অঘটন ঘটে যাবার আগেগাজীর কোন বিশ্বাস নাই; ওর দ্বারা সবকিছুই সম্ভবমাহবুব টেলিফোনের দিকে এগিয়ে যায়হঠাৎ টেলিফোনটাই বেজে উঠেরেড টেলিফোনমাহবুব ত্রস্তে উঠিয়ে নেয় রিসিভারপ্রধানমন্ত্রী অপর প্রান্তে,
-মাহবুব তুই জলদি চলে আয় আমার বাসায়গাজী এক মেজর আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের ধইরা আনছে এক বিয়ার অনুষ্ঠান থ্যাইকাঐ মেজর গাজীর বউ-এর সাথে ইয়ার্কি মারার চেষ্টা করছিলউপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবেবেশি বাড় বাড়ছে সেনাবাহিনীর অফিসারগুলির
সব শুনে মাহবুব জানতে চাইলো,
-স্যার গাজী সাহেবকে জিজ্ঞেস করুন মেজর ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের কোথায় রেখেছেন তিনি?
-
ওদের সাথে কইরা লইয়া আইছে গাজীগেইটের বাইরেই গাড়িতে রাখা হইছে বদমাইশগুলারেজানালেন প্রধানমন্ত্রী
-স্যার গাজী সাহেব ডালিম আর নিম্মীকেই তুলে এনেছে লেডিস ক্লাব থেকেওখানে ডালিমের খালাতো বোনের বিয়ে হচ্ছিল আজজানাল মাহবুব
-কছ কি তুই! প্রধানমন্ত্রী অবাক হলেন
-আমি সত্যিই বলছি স্যারআপনি ওদের খবর নেন আমি এক্ষুণি আসছি
এই কথোপকথনের পরই মাহবুব লিটুকে সঙ্গে করে চলে আসে ৩২নং ধানমন্ডিতেমাহ্‌বুবের ভিতরে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রেহানা, কামাল ছুটে বাইরে এসে আমাদের ভিতরে নিয়ে যায়আলম ও চুল্লুর রক্তক্ষরণ দেখে শেখ সাহেব ও অন্যান্য সবাই শংকিত হয়ে উঠেন
-
হারামজাদা, এইডা কি করছস তুই?
গাজীকে উদ্দেশ্য করে গর্জে উঠলেন শেখ মুজিবচেয়ার ছেড়ে উঠে এসে নিম্মী এবং আমাকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি খালাম্মা ঠিকমত হাটতে পারছিলেন নাকামাল, রেহানা ওরা সবাই ধরাধরি করে ওদের উপরে নিয়ে গেলশেখ সাহেবের কামরায় তখন আমি, নিম্মী আর গাজী ছাড়া অন্য কেউ ছিল না নিম্মী দুঃখে-গ্ল্যানিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লশেখ সাহেব ওকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চেষ্টা করছিলেনঅদূরে গাজী ভেজা বেড়ালের মত কুকড়ে দাড়িয়ে কাঁপছিলহঠাৎ ফোন বেজে উঠলরেড ফোনশেখ সাহেব নিজেই তুলে নিলেন রিসিভারগাজীর বাসা থেকে ফোন এসেছে বাসা থেকে খবর দিল আর্মি গাজীর বাসা রেইড করে সবাইকে ধরে নিয়ে গেছেশুধু তাই নয় সমস্ত শহরে আর্মি চেকপোষ্ট বসিয়ে প্রতিটি গাড়ি চেক করছেক্যান্টনমেন্ট থেকে কিডন্যাপিং এর খবর পাওয়ার পরপরই ইয়ং-অফিসাররা যে যেখনেই ছিল সবাই বেরিয়ে পড়েছে এবং খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে মেজর ডালিম ও তার স্ত্রী নিম্মীকেসমস্ত শহরে হৈচৈ পড়ে গেছেগাজীরও কোন খবর নেইগাজীকে এবং তার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরও খুঁজছে আর্মি তন্নতন্ন করে সম্ভাব্য সব জায়গায়টেলিফোন পাওয়ার পর শেখ সাহেবের মুখটা কালো হয়ে গেলফোন পেয়েই তিনি আমাদের সামনেই আর্মি চীফ শফিউল্লাহকে হটলাইনে বললেন,
-
ডালিম, নিম্মী, গাজী সবাই আমার এখানে আছে, তুমি জলদি চলে আসো আমার এখানে
ফোন রেখে শেখ সাহেব গাজীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-মাফ চা নিম্মীর কাছে

গাজী শেখ সাহেবের হুকুমে নিম্মীর দিকে এক পা এগুতেই সিংহীর মত গর্জে উঠল নিম্মী,
-
খবরদার! তোর মত ইতর লোকের মাফ চাইবার কোন অধিকার নাই; বদমাইশ 
এরপর শেখ মুজিবের দিকে ফিরে বলল নিম্মী,
-কাদের রক্তের বদলে আজ আপনি প্রধানমন্ত্রী? আমি জানতে চাইআপনি নিজেকে জাতির পিতা বলে দাবি করেনআমি আজ আপনার কাছে বিচার চাইআজ আমার জায়গায় শেখ হাসিনা কিংবা রেহানার যদি এমন অসম্মান হত তবে যে বিচার আপনি করতেন আমি ঠিক সেই বিচারই চাইযাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আপনারা জাতির কর্ণধার হয়ে ক্ষমতা ভোগ করছেন সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ভুলুন্ঠিত করে তাদের গায়ে হাত দেয়ার মত সাহস কম্বলচোর গাজী পায় কি করে? এর উপযুক্ত জবাব আমি আজ চাই আপনার কাছ থেকেআজ পর্যন্ত আপনি বলতে পারবেন না ব্যক্তিগতভাবে কোন কিছু চেয়েছি আপনার কাছে কিন্তু আজ দাবি করছি ন্যায্য বিচারআপনি যদি এর বিচার না করেন তবে আমি আল্লাহ্‌র কাছে এই অন্যায়ের বিচার দিয়ে রাখলামতিনি নিশ্চয়ই এর বিচার করবেন
আমি অনেক চেষ্টা করেও সেদিন নিম্মীকে শান্ত করতে পারিনিঠান্ডা মেজাজের কোমল প্রকৃতির নিম্মীর মধ্যেও যে এধরণের আগুন লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা আমার কাছেও আশ্চর্য লেগেছিল সেদিনশেখ সাহেব নিম্মীর কথা শুনে ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলেছিলেন,
-
মা তুই শান্ত হাসিনা-রেহানার মত তুইও আমার মেয়েইআমি নিশ্চয়ই এর উপযুক্ত বিচার করবঅন্যায়! ভীষণ অন্যায় করছে গাজী কিন্তু তুই মা শান্ত বলেই রেহানাকে ডেকে তিনি নিম্মীকে উপরে নিয়ে যেতে বললেন
রেহানা এসে নিম্মীকে উপরে নিয়ে গেলইতিমধ্যে জেনারেল শফিউল্লাহ এবং ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার সাফায়াত জামিল এসে পৌঁছেছেশেখ সাহেব তাদের সবকিছু খুলে বলে জেনারেল শফিউল্লাকে অনুরোধ করলেন গাজীর পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দেবার বন্দোবস্ত করতেজেনারেল শফিউল্লাহ রেসকোর্স কন্ট্রোল রুমে অপারেশন কমান্ডার মেজর মোমেনের সাথে কথা বলার জন্য টেলিফোন তুলে নিলেন,
-হ্যালো মোমেন, আমি শফিউল্লাহ বলছি প্রাইম মিনিষ্টারের বাসা থেকেডালিম, নিম্মী, গাজী ওরা সবাই এখানেই আছেপ্রাইম মিনিষ্টারও এখানেই উপস্থিত আছেনEverything is going to be all right. Order your troops to stand down এবং গাজী সাহেবের পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দাওঅপরপ্রান্ত থেকে মেজর মোমেন জেনারেল শফিউল্লাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলেন কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া অফিসার এবং তার স্ত্রীকে না দেখা পর্যন্ত এবং গাজী ও তার ১৭জন অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তার হাতে সমর্পন না করা পর্যন্ত তার পক্ষে গাজীর পরিবারের কাউকেই ছাড়া সম্ভব নয়শফিউল্লাহ তাকে অনেক বোঝাতে চেষ্টা করলেন কিন্তু মেজর মোমেন তার অবস্থানে অটল থাকলেন শফিউল্লাহর সব যুক্তিকে অসাড় প্রমাণিত করেঅবশেষে শফিউল্লাহ ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রীকে অপারেশন কমান্ডার এর শর্তগুলো জানালেনশেখ সাহেবের মুখ শুকিয়ে গেলতিনি আমাকে অনুরোধ করলেন মেজর মোমেনের সাথে কথা বলতেআমি অগত্যা টেলিফোন হাতে তুলে নিলাম,
-হ্যালো স্যার মেজর ডালিম বলছিThings are under control প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন তিনি ন্যায় বিচার করবেন
- Well Dalim it’s nice to hear from you. But as the Operation Commander I must have my demands met. I got to be loyal to my duty as long as the army is deployed for anti-miscreant’s drive. The identified armed miscreants cannot be allowed to go escort free. As far as I am concerned the law is equal for everyone so there can’t be any exception. Chief has got to understand this.বললেন মেজর মোমেন
- Please Sir, why don’t you comeover and judge the situation yourself. অনুরোধ জানিয়েছিলাম আমি
- There is no need for me to come. However, I am sending Capt. Feroz. বলে ফোন ছেড়ে দিলেন মেজর মোমেন অল্পক্ষণের মধ্যেই ক্যাপ্টেন ফিরোজ এসে পড়লফিরোজ আমার বাল্যবন্ধুএসেই আমাকে জড়িয়ে ধরল
-তুই গাজীরে মাফ কইরা দেআর গাজী তুই নিজে খোদ উপস্থিত থাকবি কন্যা সম্প্রদানের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্তঅনেকটা মোড়লী কায়দায় একটা আপোষরফা করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী
-
আমার বোনের সম্প্রদানের জন্য গাজীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার কোন প্রয়োজন নেইওকে মাফ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়সেটা হবে আমার জন্য নীতি বিরোধিতাআমরা দেশ স্বাধীন করেছি রক্তের বিনিময়েআমাদের গা থেকে রক্ত ঝরাটা কোন বড় ব্যাপার নয়ইউনিফর্মের চাকুরি করি টাকা-পয়সার লোভেও নয়একজন সৈনিক হিসাবে আমার আত্মমর্যাদা এবং গৌরবকে অপমান করেছেন গাজী নেহায়েত অন্যায়ভাবেআপনিই আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন জনগণের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যঅবৈধ অস্ত্রধারীদের খুঁজে বের করে আইনানুযায়ী তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতেসেখানে আজ আমাদেরই ইজ্জত হারাতে হল অবৈধ অস্ত্রধারীদের হাতে! আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে কথা দিয়েছেন এর উচিত বিচার করবেনআমরা আপনি কি বিচার করেন সেই অপেক্ষায় থাকব
ক্যাপ্টেন ফিরোজকে উদ্দেশ্য করে সবার সামনেই বলেছিলাম, দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন বিচারের ওয়াদা করেছেন সেক্ষেত্রে গাজীর পরিবারের সদস্যদের আর আটকে রাখার প্রয়োজন কি? কর্নেল মোমেনকে বুঝিয়ে তাদের ছেড়ে দেবার বন্দোবস্ত করিস
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম ঠিক সেই সময় শেখ সাহেব বললেন,
-
আমার গাড়ি তোদের পৌঁছে দেবে
-তার প্রয়োজন হবে না চাচাবাইরে লিটু-স্বপনরা রয়েছে তাদের সাথেই চলে যেতে পারব
বাইরে বেরিয়ে দেখি ৩২নং এর সামনের রাস্তায় গাড়ির ভীড়ে তিল ধারণের ঠাই নেই
পুলিশ অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেবন্ধু-বান্ধবরা যারাই জানতে পেরেছে আমাদের কিডন্যাপিং এর ব্যাপারটা; তাদের অনেকেই এসে জমা হয়েছে স্বতঃস্ফুর্তভাবেআমাদের দেখে সবাই ঘিরে ধরলসবাই জানতে চায় কি প্রতিকার করবেন প্রধানমন্ত্রী এই জঘণ্য অপরাধেরসংক্ষেপে যতটুকু বলার ততটুকু বলে ফিরে এলাম লেডিস ক্লাবেমাহবুবও এল সাথেমাহবুবের উছিলায় সেদিন রক্ষা পেয়েছিলাম চরম এক বিপদের হাত থেকে আল্লাহ্‌পাকের অসীম করুণায়বিয়ের আসরে আমরা ফিরে আসায় পরিবেশ আবার আনন্দ-উচ্ছাসে ভরে উঠলসবাই আবার হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে বিয়ের বাকি আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন করে কন্যা সম্প্রদান করা হলতাহমিনার বিয়ের রাতটা আওয়ামী দুঃশাসনের একটা ঐতিহাসিক সাক্ষী হয়ে থাকলোজ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকলো আওয়ামী নেতাদের এবং তাদের ব্যক্তিগত বাহিনীর ন্যাক্কারজনক স্বেচ্ছাচার ও নিপীড়নেরকী করে এমন একটা জঘণ্য ঘটনার সাথে গাজী সরাসরি নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে পেরেছিল তার কোন যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছিলাম নাঅনেক পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছিলাম আমাদের কুমিল্লা অপারেশনের পর পার্টির তরফ থেকে শেখ মুজিবের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল আমাদের বিশেষ করে আমার ঔদ্ধত্বের উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্যকিন্তু শেখ মুজিব ঐ চাপের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, “আর্মি কোন কাঁচা কাজ করে নাইতারা আইন অনুযায়ী সবকিছু করছে, প্রত্যেককে ধরেছে হাতেনাতে প্রমাণসহ সে ক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি?” তার ঐ কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ আওয়ামী নেতাদের একাংশআইনের মাধ্যমে যদি কোন কিছু করা না যায় তবে অন্য কোনভাবে হলেও শিক্ষা তাদের দিতেই হবে এবং সেই দায়িত্বটাই গ্রহণ করেছিলেন সেই সময়ের Top terror and most powerful leader বলে পরিচিত গাজী গোলাম মোস্তফাতখন থেকেই নাকি সুযোগ খুঁজছিলেন তিনি জিঘাংসা মিটাতে বিয়ে বাড়িতে বাপ্পি এবং তার ছেলেদের মাঝে যে সামান্য ঘটনা ঘটে সেটাকেই সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে গাজী চেয়েছিল আমাকে উচিত শিক্ষা দিতেএ বিষয়ে মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি তার বই ‘বাংলাদেশ! সামরিক শাসন এবং গণতন্ত্রের সংকট’ এ লিখেছেন, “গাজী সমর্থক লোকদের সম্ভবতঃ মেজর ডালিম ও তার স্ত্রীকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল  (তথ্যঃ http://web.archive.org/_ লিঙ্ক )
সত্যকে গোপন করে বেশী দিন রাখা যায়না, মিথ্যাও চেপে রাখা যায়না। তাইতো ওদের কল্যাণেই আজ সত্য বেড়িয়ে আসছে। আজকে ওরাই প্রমাণ করছে শেখ কামালের নিষ্কলঙ্কতা।

মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
লেখক_ অন্যধারা প্রকাশন

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)