তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আওয়ামী লীগের সৃজন, ইদানীং নেই প্রয়োজন, এই শ্লোগান দিয়েই আমি আজকে শুরু করছি আজকের আলোচনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়টা আজকাল সেকেলে হয়ে গেছে। এখন আর কেউ এটি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনা। তবে আমি আজকে আলোচনা করছি এজন্যেই যে_ সবাইকে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই, কেন এই ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই _ সেটা হল সময়ের বাস্তবতা এবং বিএনপির ভূমিকা।
আমাদের দেশের রাজনীতিকদের পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস এবং অনৈক্যেরফসল হিসেবে, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে মরন ব্যধি আক্রান্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নামের যে শিশুটি জন্ম হয় , ২০১১ সালে সে শিশুটির অবধারিত পরিণতি ঘটে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে এবং গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মাধ্যমে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সূত্রপাতঃ
১৯৯০ সালে গণ অভ্যুত্থানের ফলে জেনারেল এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর সারাদেশে এক বিশৃংখলাতৈরি হয়, তাইদেশে স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব প্রধান রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, একটি অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারন নির্বাচন করা হবে। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের পথ দূরপ্রসারিত করা।
একটি সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সৃষ্ট দুটি জোট একটি অভিন্ন ফর্মূলা তৈরি করে। ফর্মূলায় বলা হয় আমরা পরপর তিন টার্ম (৫+৫+৫=১৫ বছর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করব। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পরিপূর্ণতা পেলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ফিরে যাব।
১৯৯১ সালে রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়। পরে জাতীয় সংসদে সেদিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব কাজের বৈধতা দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরে দাঁড়ায় ও বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পাগল ও শিশুদের সরকার বলে দাবি করেন। শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নামের শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করার প্রক্রিয়া। রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৯৪ সালের মাগুরা মার্কা নির্বাচন করার পর থেকেই আন্দোলনে ভিন্ন মাত্রা পায়। তৎকালীন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয় ২৬ জুনের মধ্যে সরকার একটি সংশোধনী বিল উত্থাপন করলে সংসদে যোগদান করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপরেখাঃ
২৭ জুন তৎকালীন বিরোধী দল সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি রূপরেখা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, এ ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার পরঃ
১. প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন।
২. সংসদের নির্বাচন না হওয়া এবং নয়া সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতি বিরোধী দলগুলোর সাথে পরামর্শক্রমে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি দেবেন যিনি উক্ত সময়ে সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী কিংবা তারমন্ত্রীরা অনুষ্ঠেয় কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন না কিংবা তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যও হতে পারবেন না।
৪. অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল দায়িত্ব হবে অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং দেশের জরুরি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৫. নয়া প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদবলে শপথ গ্রহণ করার অব্যবহিত পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এই রূপরেখায় আরো বলা হয়ঃ
১. নির্বাচন কমিশন এমনভাবে পুনর্গঠিত ও পুনর্বিন্যস্ত করা হবে যাতে করে এটা একটি সত্যিকারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে।
২. একটি স্বব্যাখ্যাত নির্বাচনী আচরণবিধিপ্রণয়ন করা হবে ও তা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেয়া হবে।
৩. উপরিউক্ত দু’টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনবোধে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের এই প্রস্তাব তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি নাকচ করে দিয়ে বলে, বিরোধী দল স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করে সেখানে মনোনীত ও অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় বসাতে চাইছে। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক প্রস্তাব কখনোই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার এন্ডিং ফেয়ারওয়েলের ব্যবস্থায় বিনপির ভূমিকাঃ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আজ্ঞাবহ করার জন্য বিচার বিভাগকে দলীয়করণ, বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধিসহ নানা প্রস্তুতি নিয়ে এমন এক অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করে যে পদত্যাগী সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির আসনটি বিতর্কিত হয়ে ওঠে। বিএনপি কারচুপি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স বৃদ্ধি করে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাদের 'দলীয় বিচারপতি' কেএম হাসান যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে।
অনেক আন্দোলনের পর ১৯৯৫ সালের ১২ ডিসেম্বর বিএনপি নেতারা বিরোধী দলগুলোর সাথে একটি সমঝোতায় আসার প্রচেষ্টা চালান। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে সরকার একটি নিম্নরূপ ৩-দফা প্রস্তাব পেশ করেঃ
১. প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন দলের মধ্য থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করবে এবং সেই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।
২. নয়া প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবেন না।
৩. বিরোধী পক্ষ বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব বা রূপরেখা প্রণয়ন করবে।
ক্ষমতাসীন দলের মধ্য থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী করার কি কিম্ভুতকিমাকার প্রস্তাব! যদিও এ ব্যাপারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর মধ্যে বেশ কয়েক দফা চিঠি লেখালেখি হয়, কিন্তু কিম্ভুতকিমাকার প্রস্তাবটি স্বাভাবিকভাবেই আলোর মুখ দেখেনি।
এতো আন্দোলনের পরেও হরতালের মধ্যে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রহসনের নির্বাচন করা হয়। বিরোধী দল আবার ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারের বিরুদ্ধে তিন দিনব্যাপী এক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সরকারি ও আধা সরকারি অফিসগুলোতে অনুপস্থিত থাকা, সড়ক-নদী-রেলপথ অবরোধ ও চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর বন্ধ করে দেয়ার কর্মসূচি দেয়। দুর্দমনীয় আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য করা হয়।
৩০ মার্চ বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন ও সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন। “গণতন্ত্র মঞ্চ” বলে কথিত বিশাল এক গণমঞ্চ থেকে তিনি জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া তার গত্যন্তর ছিল না, কারণ সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই।
তত্ত্বাবধায়ক আদায়ের পর আপোষহীন নেত্রীর বক্তব্যঃ
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার এক বিবৃতিতে তার দলের পক্ষ থেকে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন। বিবৃতিতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্য কামনা করেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য সহযোগীদের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তাদের প্রজ্ঞা, নিরপেক্ষতা এবং কর্মদক্ষতার ওপর আমরা আস্থা জ্ঞাপনকরছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের অপরিসীম ত্যাগ ও তিন দলের আন্দোলনের ফলে বিএনপি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, বাঙালি জাতি আর একবার প্রমাণ করেছে, জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে কোনো স্বৈরাচারী শক্তি টিকে থাকতে পারে না। ন্যায্য ও সত্যের সংগ্রাম সব সময় জয়ী হয়। আন্দোলনে বহু ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করার জন্য সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সংস্কৃতিসেবী, কবি, সাহিত্যিক, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, ব্যবসায়ী, নারীসমাজ, এনজিও, সাংবাদিক, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষসহ সবাই আন্দোলনে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বিবৃতির শুরুতে তিনি বলেন, বিজয়ের এই আনন্দঘন মুহূর্তে সংগ্রামী জনগণের পক্ষ থেকে আমি পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলনে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তিনি বলনে, বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজবন্দী হিসেবে কারাগারে আছেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তাদেরমুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য তার দল দীর্ঘ দিন সংগ্রাম করেছে। পঞ্চম সংসদে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পেশ করা হলেও ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের একদলীয় মনোভাবের কারণে সে বিল সংসদে উত্থাপনের সুযোগ পাওয়া যায়নি। মিরপুর, মাগুরাসহ বিভিন্ন উপনির্বাচনে এবং স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ভোট কারচুপি, সন্ত্রাস ও প্রাণহানির ঘটনার কারণেই বিরোধী দল এই দাবি করেছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। (তথ্যঃ ছাত্র সংবাদ বিডি ডট কম)
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পরিবর্তন আনতে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবঃ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পরিবর্তন আনতে আওয়ামী লীগ সুস্পষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন। এই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে আগের সরকার পুনর্বহাল হবে। সেই সরকার যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে। সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির সাথে বৈঠকে এই প্রস্তাব দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
২৮ এপ্রিল ২০১১ সংবিধান সংশোধনকমিটির সাথে বৈঠক শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। ব্যর্থ হলে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সরকার বহাল হয়ে যাবে এবং তারা নির্বাচন করবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনকালের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভ তাদেরও পেয়ে বসেছিল। তাই তিন মাসের বদলে তারা দুই বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মতিয়া চৌধুরী, আবদুল জলিল, মোহাম্মদ নাসিমসহ ১৩ জন যোগ দেন। সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারপারসন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
২৮ এপ্রিল ২০১১ সংবিধান সংশোধনকমিটির সাথে বৈঠক শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। ব্যর্থ হলে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সরকার বহাল হয়ে যাবে এবং তারা নির্বাচন করবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনকালের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভ তাদেরও পেয়ে বসেছিল। তাই তিন মাসের বদলে তারা দুই বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মতিয়া চৌধুরী, আবদুল জলিল, মোহাম্মদ নাসিমসহ ১৩ জন যোগ দেন। সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারপারসন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদের সরকারি ও বিরোধী দল পাঁচজন করে নাম প্রস্তাব করবে। এখান থেকে আলোচনার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিদ্যমান ব্যবস্থাও থাকবে। আমরা চাই, বিচার বিভাগের বাইরে আরো বিকল্প ব্যবস্থা থাকুক।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সংসদে সরকার ও বিরোধী দল আলোচনা করে ১০ জন উপদেষ্টার নাম দিতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব কি না জানি না। সংবিধান সংশোধন কমিটিতে নাম চাওয়া হয়েছিল। সেটাও প্রধান বিরোধী দল দেয়নি।’
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতাসহ একক ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা যায়, সে ব্যাপারে কমিটি প্রস্তাব দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপি এককভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাস করে। আইনটি তারা নিজেদের মনমতো করে পাস করিয়েছে। এতে অন্যদের মত দেয়ার সুযোগ ছিল না। যে কারণে এই বিধানটিকে সংশোধনীর মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
(২৮-০৪-২০১১, প্রথম আলো)। (তথ্যঃ ছাত্র সংবাদ বিডি ডট কম)
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পরিবর্তন আনতে বিএনপির উদ্ভট প্রস্তাবঃ
১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরউপদেষ্টা থেকে ১০ জন নির্বাচন করা। আমরা এবার দেখে নেই ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরউপদেষ্টাদের তালিকাঃ
১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দশজন উপদেষ্টাঃ
১. ডঃ মুহম্মদ ইউনূস,
২.অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ,
৩. ব্যবসায়ী সৈয়দ মনজুর এলাহী,
৪. শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী,
৫. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ(মৃত),
৬.অধ্যাপক শামসুল হক(মৃত),
৭.সেগুফতা বখত চৌধুরী(মৃত),
৮. মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রহমান খান(মৃত),
৯. অধ্যাপক নাজমা আহমেদ,
১০.এ জেড এ নাসিরউদ্দীন ,
১. ডঃ মুহম্মদ ইউনূস,
২.অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ,
৩. ব্যবসায়ী সৈয়দ মনজুর এলাহী,
৪. শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী,
৫. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ(মৃত),
৬.অধ্যাপক শামসুল হক(মৃত),
৭.সেগুফতা বখত চৌধুরী(মৃত),
৮. মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রহমান খান(মৃত),
৯. অধ্যাপক নাজমা আহমেদ,
১০.এ জেড এ নাসিরউদ্দীন ,
২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দশজন উপদেষ্টাঃ
১.রোকেয়া আফজাল রহমান,
২.এম হাফিজ উদ্দিন খান,
৩.এ এস এম শাহজাহান,
৪. ব্যবসায়ী সৈয়দ মনজুর এলাহী (১৯৯৬ সালে ও উপদেষ্টা ছিলেন),
৫. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ(মৃত,১৯৯৬ সালে ও উপদেষ্টা ছিলেন),
৬. বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায়চৌধুরী(মৃত),
৭. এ কে এম আমানুল ইসলাম চৌধুরী(মৃত),
৮. মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী(মৃত),
৯. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী,
১০. ব্রিগেডিয়ার আবদুল মালেক।
১.রোকেয়া আফজাল রহমান,
২.এম হাফিজ উদ্দিন খান,
৩.এ এস এম শাহজাহান,
৪. ব্যবসায়ী সৈয়দ মনজুর এলাহী (১৯৯৬ সালে ও উপদেষ্টা ছিলেন),
৫. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ(মৃত,১৯৯৬ সালে ও উপদেষ্টা ছিলেন),
৬. বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায়চৌধুরী(মৃত),
৭. এ কে এম আমানুল ইসলাম চৌধুরী(মৃত),
৮. মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী(মৃত),
৯. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী,
১০. ব্রিগেডিয়ার আবদুল মালেক।
এখানে দেখা যাচ্ছে, সর্বমোট উপদেষ্টাঃ ১৮ জন, মৃতঃ ৭ জন, শারীরিকভাবে সক্ষমঃ ৭ জন, যেখানে উপদেষ্টা প্রয়োজনঃ ১০ জন সেখানে এই প্রস্তাব হাস্যকর।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস করলেন কে?
বর্তমান সরকারের সফলতার দিকে যদি আমরা চোখ বুলাই তাহলে দেখা যাবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিল্প, জ্বালানী, নিরাপত্তা প্রভৃতি সেক্টরে আওয়ামীলীগ সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৩০০ মেগাওয়াট থেকে ৮১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশের রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছেছে। ৭টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সেনার সংখ্যা ১০০০ থেকে ৫০০০ হয়েছে এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সর্বাধিক সেনা সরবরাহকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যা আমাদের বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। তাছাড়া বিগত সরকারের পাঁচ বছরে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান হয়েছিলো প্রায় ৪ লক্ষ কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লক্ষ ৮২ হাজারে। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার কৃতিত্ব অবশই প্রশংসার দাবী রাখে। আর সবচেয়ে আলোচিত দুটি বিষয় (১) বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং (২) যুদ্ধাপরাধীর বিচার। এ দুটি কাজ তারা সফলতার সাথেই সম্পন্ন করতে পেরেছেন এবং করছেন।
এতো সফলতা অর্জনের পরও সরকার কি ভীত হয়ে ত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস করলেন? বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ধ্বংসের কাজ শুরু হয়েছে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ও লতিফুর রহমানের হাত দিয়ে। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরেই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ও লতিফুর রহমান অবৈধভাবে প্রশাসনের রদবদল শুরু করেন। প্রশাসনকে চারদলীয় জোটকে সহায়তা করার জন্য অবৈধভাবে ব্যবহার শুরু করেন। লতিফুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে পূর্ববর্তী সরকার অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে গেছেন এমন ধরনের কথা বলে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে সহায়তা করেন। সর্বোপরি সংখ্যালঘুরা যাতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে না পারে সেজন্য নির্বাচনের আগেই প্রশাসনের প্রটেকশনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা ও নারী নির্যাতন শুরু হয়। তারপরে আরপিও-তে না থাকা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি নির্দেশের মাধ্যমে নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নামানো হয় এবং ওই সেনাবাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে সন্ত্রাসী ধরার নামে সমস্ত আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের হেনস্থা করা হয়, যার তালিকা তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লতিফুর রহমান ক্ষমা করে দিয়ে জেল থেকে বের করে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে কাজ করার সুযোগ দেন। তারপরে ২০০১ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সেটা দেশবাসী জানে। তাই ভবিষ্যতে নির্মোহভাবে যখন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হবে তখন ঠিকই লেখা হবে, বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ও লতিফুর রহমান। বর্তমান মিডিয়া বা মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা এই দু’জনের কথা বা তাদের সঙ্গে একাজে জড়িত ব্যারিস্টার ইশতিয়াকসহ যাঁরা ছিলেন তাঁদের কথা বলেন না, কারণ এরা সকলেই সুশীল সমাজের লোক। আমাদের মিডিয়ায় তথাকথিত সুশীল হতে পারলে সাত খুন মাফ। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন ১/১১-এর পরে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর নির্দেশে ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী ও ড. ইউনূস দু’জনই রাজনৈতিক দল করেন। ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীকে মিডিয়া নিন্দা করে অন্যদিকে ড. ইউনূস নন্দিত। এর কারণ একজন রাজনীতিবিদ একজন সুশীল। যাহোক, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ও লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক ধ্বংস করার পরে এর জানাজা বাকি ছিল। ২০০৬-এ বিএনপি-জামায়াতের রাষ্ট্রপতি ইয়েস ম্যান ইয়াজউদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করে এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জানাজা পড়েন খালেদা জিয়া। (তথ্যঃ প্রিয় ব্লগ )
গনতন্ত্রকে পনুরুদ্ধারের জন্য এত সংগ্রাম এত কিছু করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনা হয় ইয়াজউদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জানাজা পড়ে ওরাই প্রমাণ করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আওয়ামী লীগের সৃজন, ইদানীং নেই প্রয়োজন। সুতরাং এই সরকারের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার কুলখানি করা ছাড়া কিবা আর করার ছিল!
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
লেখক_ অন্যধারা প্রকাশন
আমার এ আর্টিকেলটি প্রস্তুত করতে যাদের আর্টিকেল এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সহায়তা নিয়েছি, তাদের নিকট আমি ঋণী। নিন্মে কিছু তথ্য সুত্র উল্লেখ করছিঃ
০৯/ বিভিন্ন ব্লগ
