২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ_ 'প্রথম কাজ দেশবাসীকে জানানো, আমি সুস্থ আছি'_ কালের কণ্ঠ

MS ISLAM _ BDTutorials2
3

আগস্ট যেন অঘটনের মাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এ মাসে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলাও হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ২০০৫ সালে সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে আগস্টেই। দেশবাসীর জন্য তো বটেই, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্যও যেন এই মাস আতঙ্কের। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর জীবন কেড়ে নেওয়ার ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের সেই আগস্টেই তাঁর কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইতিহাসের বর্বরোচিত আর্জেস গ্রেনেড হামলা হয়। সন্ত্রাসীদের সেই গ্রেনেড আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ নেতা-কর্মীর জীবন নিলেও প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তবে একের পর এক বিস্ফোরিত গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর দুই কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক কান দিয়ে রক্তও ঝরছিল।
ওই ভয়াবহ হামলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েও তিনি কিন্তু নিজের কথা ভাবেননি। সেদিনও শেখ হাসিনা পরিচয় দিয়েছেন দেশপ্রেম, ত্যাগ আর অসীম ধৈর্যের। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা যখন তাঁকে আত্মগোপনে রাখার কথা চিন্তা করেছেন বা রাজনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, আজকের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু তখন নিজের অবস্থা ও অবস্থান দেশবাসীকে জানাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। নচেত দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তাঁর। এটা ছিল তাঁর দৃঢ মানসিকতা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার অনন্য নজির।শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তখন বলেছিলেন, ‘এখন আমাদের প্রথম কাজ হবে আমি সুস্থ আছি এটা দেশবাসীকে জানানো। আর এতে সময় বেশি নিলে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে সংঘাত-সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে। হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশের গণতন্ত্র। দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে হবে আমি বেঁচে আছি। আমি সাক্ষাৎকার দেব। তিনি বলেন, হরতাল দেওয়া যাবে না। আগে আহতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও নিহতদের দাফন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর অন্যকিছু।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান। আওয়ামী লীগের সভপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনও প্রায় একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা পরের দিন হরতাল ডাকার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে বাদ সাধেন নেত্রী (শেখ হাসিনা)। তিনি বললেন, না হরতাল দেওয়া যাবে না। আগে আহত-নিহতদের খোঁজ-খবর নিতে হবে, তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। লেনিন জানান, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যখন ভাবছেন রাজনৈতিক কঠোর কর্মসূচির কথা, আহত শেখ হাসিনার ভাবনায় তখন গণতন্ত্র আর দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সবার মনে একটি প্রশ্ন- শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন তো? এ সময় সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টিও তাঁকে ঘিরে। আওয়ামী লীগ সভাপতি কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা জাতিকে জানানোর তীব্র তাগিদ গণমাধ্যমের। কিন্তু কিছুতেই জানা সম্ভব হচ্ছিল না শেখ হাসিনার অবস্থা ও অবস্থান। গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁর খবর জানার জন্য নির্ভরযোগ্য কাউকেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা জানান, একপর্যায়ে বিবিসির ঢাকা অফিসের প্রতিবেদক কাদির কল্লোল তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানান বিবিসি শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চায়। কিন্তু কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না আবদুল জলিল। ফোন দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ সভাপতির তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেনসহ আরো দুই-তিনজনকে। সবারই এক কথা- নেত্রী গুরুতর আহত। তিনি কথা বলতে পারবেন না।
তবে বিষয়টি জানার পর শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার যা হয় হবে, কিন্তু দেশকে অনিবার্য সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে আমি ঠেলে দিতে পারি না। গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে আমি পারব না। আমি আমার অবস্থান দেশবাসীকে জানাব। আমি সাক্ষাৎকার দেব। আবদুল জলিল তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘নেত্রী আপনি আহত, আপনার কান দিয়ে রক্ত ঝরছে। এই মুহূর্তে আপনার কারো সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে না। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিস্থিতি যেদিকেই যাক গণতন্ত্রের স্বার্থে, শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে আমাকে কথা বলতে হবে। আমি বেঁচে আছি দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনার এই দৃঢ় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত আবদুল জলিল যোগাযোগ করেন বিবিসির সঙ্গে। তাঁর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লন্ডন বিবিসি অফিস থেকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।

বিবিসির সেই সাক্ষাৎকার : একজন ফটোগ্রাফার ছবি পাননি। তাই আমি একটু দাঁড়ালাম। কিছু বলার আগেই হঠাৎ আওয়াজ। আমরা সবাই বসে পড়লাম। সামনে একটা টেবিলও ছিল। একটার পর একটা গ্রেনেড হামলা হয়েই যাচ্ছে। তখনো আমরা আসলে এটা যে গ্রেনেড না অন্য কিছু বুঝতে পারছি না। বোমের আওয়াজ হচ্ছে সেটা শুনতে পাচ্ছি। আমাকে তো নেতা-কর্মীরা ঘিরে ফেলল। পাশেই হানিফ ছিলেন (প্রয়াত)। তাঁর ওপরও গ্রেনেড হামলা হলো, রক্ত ঝরছিল। তিনটা গ্রেনেডের আওয়াজের পর সে আমাকে বলল, আপা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে চলে যান। কিন্তু একটু নড়াচড়া করতেই আবার শুরু হলো। এরপর তো আর থামে না। মানে এটা একটা কেয়ামতে রূপ নিয়েছিল। কিছুতেই থামে না, একটার পর একটা শুধু আওয়াজ হচ্ছিল। কী যেন হচ্ছিল, কেউ বুঝতে পারছিল না। আমার চশমাটা কোথায় ছিটকে পড়ে গেছে। এ অবস্থার মধ্যে কিছু দেখতে পারছি না ভালো করে। একটা পর্যায়ে যখন কিছুটা থামল, সেই সময় ওরা আমার সঙ্গে যারা (দলীয় নেতা) ছিল, আমাকে গাড়িতে তুলে দিল। 

তথ্য সূত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/08/21/119294#sthash.iwGJ9XBO.dpuf

Post a Comment

3Comments
  1. Hi, very good article.
    Thanks for sharing keep up the good work.

    ReplyDelete
  2. Hi, very good article.
    Thanks for sharing keep up the good work.

    ReplyDelete
  3. Hi, very good article.
    Thanks for sharing keep up the good work.

    ReplyDelete
Post a Comment