একুশের সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের বিভিন্ন উদ্ভট সিদ্ধান্তের কারণে বাংলা ভাষাভাষী জনতা ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং মিছিল বের করার ফলে অনেকে গ্রেফতার হন।
২১শে মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেস র্কোস ময়দানে তৎকালিন গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা করেন “উর্দূ এবং উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।” এমন কিন্ভূতকিমাকার দাবীর ফলে বাংলার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং মানিনা মানবনা দাবী উঠে সারা বাংলায়।
এভাবে ৪ বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর যখন পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র থামেনা বরঞ্চ ২৭শে জানুয়ারী ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের নব নিযুক্ত গর্ভণর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিন ঢাকায় এসে আবারো ঔদ্ধত্য ভাবে ঘোষনা দেন “উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” এই ঘোষণা শোনার পর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো গর্জে উঠে বাঙ্গালী জাতি, প্রতিবাদে জ্বলে উঠে সারা বাংলা।
২১শে ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ র্কতৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল তথা ৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ সকাল ৯টা হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে লাগলো ছাত্র জনতা। ঐতিহাসিক আমতলা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো। পাকিস্তান সরকার ঐ দিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। একসময় সমবেত ছাত্র জনতা গাজীউল হকের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সবাই মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিছিল যখন ঢাকা মেডিক্যালের কাছাকাছি আসে তখন শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলোগুলি। গুলি খেয়ে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। বুলেটের আঘাতে রফিকের মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে জব্বার ও বরকত ঐ দিন রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়নে। আহত অবস্থায় ২৫শে ফেব্রুয়ারী রাতে মারা যান সালাম।
যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই ২১শে ফেব্রুয়ারী বা ৮ই ফাল্গুন তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পেয়েছি, রক্ষা করতে পেরেছি আমাদের মায়ের ভাষাকে, বাংলা মায়ের সেই গর্বের ধনদের একজন একজন হলেন আমাদের মানিকগঞ্জের মানিক শহীদ রফিক।
পরিচিতিঃ ভাষা শহীদ রফিক। যার পুরো নাম রফিক উদ্দিন আহমদ। পিতার নাম আবদুল লতিফ। জন্ম তারিখ-৩০শে অক্টোবর ১৯২৬ সাল। গ্রামের নাম-পারিল। বতর্মানে যার নামাকরন করা হয়েছে রফিকনগর। ইউনিয়ন-বলধারা, থানা-সিঙ্গাইর, জেলা-মানিকগঞ্জ। ভাষা শহীদ রফিক পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন। তিনি তার বাড়ী থেকে ৭ মাইল দুরে অবস্থিত বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিকুলেশ পাশ করেন ১৯৪৯ সালে। পরে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন।
গ্রামে বিভিন্ন লোকের কাছে শহীদ হওয়ার কয়েক দিন পর ভালবাসার মানুষের সাথে তার বিয়ের দিনক্ষন ঠিক ছিল। সেই উপলক্ষেই বিয়ের বাজার সদায় করার জন্য ঢাকায় যাওয়া। কিন্তু এই মহান ব্যক্তি যখন শুনতে পেলেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে মিছিল বের হবে তখন তিনি ছুটে যান এই মিছিলে। তৎকালিন সরকার কর্তৃক আরোপিত ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতার সাথে তিনিও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহন করেন।
তিনি আমাদের মায়ের মুখের ভাষাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন কিন্তু ভালবাসার "পারিল" গ্রামে ফিরে আসতে পারেনি। মৃত্যুর পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি ঢাকার বুকেই চিরনিদ্রায় শায়িত। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
সরকারী ভাবে ২০০৬ সালে তারঁ "পারিল" গ্রামে ভাষা শহীদ পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন করা হয়। যেখানে তার ব্যবহৃত জিনিষপত্র ও প্রচুর বই আছে। তারও আগে প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্দ্যোগে তারঁ বাড়ী সংলগ্ন একটি ছোট লাইব্রেরী গঠন করা হয়। যেখানে মূলত উনার স্মৃতি গুলো প্রথম থেকে সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করা হয়।
বিভিন্ন ব্লগ এবং সাইট থেকে শহীদ রফিকের স্মৃতি স্মরণে আমি কিছু ছবি সংগ্রহ করেছি নিন্মে পাঠক সমীপে তা উল্লেখ করছিঃ
চিত্রঃ- শহীদ রফিক পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর।
চিত্রঃ-যাদুঘরে সামনের অংশ।
চিত্রঃ-শহীদ রফিকের গ্রামের বাড়ী।
চিত্রঃ- বাড়ী সংলগ্ন প্রথম লাইব্রেরী।
চিত্রঃ-বাড়ী সংলগ্ন লাইব্ররীর ভিতরের ছবি।
চিত্রঃ- রফিক নগর চৌরাস্তা।
চিত্রঃ- শহীদ রফিকের স্কুল, যেখান থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন।
চিত্রঃ- "নছিমন" গাড়ী ঐ গ্রামের বাহন।