একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাঁর সেই বজ্র কণ্ঠস্বর ভেসে আসবে বর্তমান যুগের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট থেকেও। জানা যাবে বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক বদলানো সিংহপুরুষের নানা স্মৃতি ও কর্ম সম্পর্কে।
তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিজীবন ও দিকনির্দেশনামূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনের একটি মাত্র অ্যাপ্লিকেশনেই মিলবে জাতির জনক সম্পর্কে প্রায় সব তথ্য, এমনকি এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি, অডিও, ভিডিও, বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা চিঠি। ঘুরে আসা যাবে ধানমণ্ডি জাদুঘরও।
স্মার্টফোনের এই দুনিয়ায় দেশ-বিদেশের কোটি কোটি তরুণ প্রজন্মের কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও দর্শন খুব সহজেই পৌঁছে দেবে এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যানড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীরা ‘বঙ্গবন্ধু’ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে পাবেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত নানা তথ্য। অ্যাপ্লিকেশনটি প্রকাশের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হলে বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়াণের মাস আগস্টেই এই অ্যাপের উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অ্যাপ্লিকেশন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তরুণ প্রজন্মের জন্য ভীষণভাবে অনুপ্রেরণার। সারা বিশ্বে এখন যে স্মার্টফোন বিপ্লব চলছে তাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে আমরা এই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে যে ৪০ কোটি বাঙালি রয়েছে তাদের কাছে সহজেই মহান নেতাকে পৌঁছে দিতে এটি আমাদের প্রথম প্রয়াস। এ জন্য আমরা অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানাই।’
‘বঙ্গবন্ধু’ অ্যাপ্লিকেশনটি প্রস্তুত করছে দেশের অন্যতম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেড। জানতে চাইলে এমসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালক আশরাফ আবির বলেন, ‘অ্যাপটিতে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে শুরু করে তাঁর পূর্ণাঙ্গ জীবনী, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন, স্বাধীনতাসংগ্রাম সব কিছুই থাকবে। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে অ্যাপটি হস্তান্তর করার পর তারাই এটির ব্যবস্থাপনা করবে।’
জানা গেছে, অ্যাপ্লিকেশনটিতে প্রবেশ করলে মূল মেন্যুতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, ভাষণ, সাক্ষাৎকার, চিঠি, ফটো গ্যালারি এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর- এই ছয়টি মেন্যু পাওয়া যাবে। আত্মজীবনীতে সংক্ষিপ্ত জীবনী ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী নামে দুটি সাব-মেন্যু রয়েছে। সংক্ষিপ্ত জীবনীতে ১৯২০ থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনাবহুল সময়ে বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ড জানা যাবে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া একজন সাধারণ ছেলে একটি রাষ্ট্রের, একটি জাতির জনক হয়ে ওঠার ধারাবাহিক বর্ণনা আছে এখানে।
বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির পিডিএফ ভার্সনও পাওয়া যাবে এই অ্যাপ্লিকেশনে। ভাষণ মেন্যুতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষণ। এখান থেকে মোবাইলেই ভাষণের ভিডিও দেখতে পাওয়া যাবে। ফটো গ্যালারিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও ব্যক্তিজীবনের ১১৩টি দুর্লভ ছবি।
এ ছাড়া সাক্ষাৎকার মেন্যুতে প্রবেশ করলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সাংবাদিকের দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ছয়টি দুর্লভ সাক্ষাৎকার পাওয়া যাবে। আর চিঠি মেন্যুতে প্রবেশ করলে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা বেশ কিছু চিঠি পাওয়া যাবে। চিঠিগুলো তিনি জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় পিতা, রাজনৈতিক সহকর্মী, স্ত্রী, সন্তানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর মেন্যুতে প্রবেশ করলে ঢাকার ধানমণ্ডিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এবং টুঙ্গিপাড়া জাদুঘরের ঠিকানা ও গুগল ম্যাপে অবস্থান জানা যাবে।
- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2014/08/15/117318#sthash.5wenhEsl.dpuf