যারা লেখালেখি করেন তাদের একটি মৌলিক অভিজ্ঞতা থাকে। আর অভিজ্ঞতা হলো, প্রায়ই কবি বা লেখককে একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়- কেন লিখেন? আমিও এর ব্যতিক্রম নই। বড় কোনো গণমাধ্যমের সম্মুখীন না হলেও আমাকেও অনেকবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। লেখকদের কাছে অনেকের এই যে প্রশ্ন,কেন? কেউ ভাবতে করতে পারেন প্রশ্নটা হতে পারে কৌতূহলের কেউ জেরাও মনে করতে পারেন। তবে কারণ তো আছেই, অকারণে কেউ হয়তো লেখালেখি বা কবিতা রচনা করেন না। কোনো একজন মানুষ কেনো অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে একটা অন্য জীবন তৈরি করতে চায়? ব্যাপারটা কি? এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে অ্যাদ্রে জিদ বলেছিলেন, ‘লিখি, কারণ না লিখলে হাত ব্যথা করে’। আর কাজী নজরুল ইসলাম তো মনে ব্যথা পেয়ে পেয়ে হাজারো কবিতা রচনা করে গেছেন। গার্সিয়া মার্কেজ বলেছিলেন, ‘লিখি যাতে আমার বন্ধুরা আমাকে আরো একটু বেশি ভালোবাসে। ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘লেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে যেসব কথা জানানো যায় না সেই কথাগুলি জানাবার জন্য লিখি।
সক্রেটিস বলেছিলেন- ‘I to die, you to live?’। তার কথা প্রচার ও প্রকাশের জন্যে হেমলক খেয়ে মরতে হলো। সক্রেটিস কিন্তু খামোখা গো না ধরে বিচারের রায়ের শর্তে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিলেই তো পারতো। তাহলে প্রাণটাও রক্ষা পেত, আরো অনেক কিছু প্রচার ও প্রকাশের সুযোগ থাকত। কিন্তু তাতে সক্রেটিস আর সক্রেটিস থাকতেন না। সত্য পরাজিত হত, মিথ্যার জয় হত। সক্রেটিস কথাটা বলে চলে গেলেন, কিন্তু আলোর মশাল জ্বেলে গেলেন সত্য ও জ্ঞানের নিরন্তর অভিষেকে।
বর্তমান জগতে অনেকে আছেন তারা সত্যের ধার ধারেন না, তারা কেন লেখালেখি করেন? তারা লিখেন বেঁচে থাকার জন্য। তাদের ভাব এমন যে, তারা না লিখলে মারা যাবেন, মারা গেলে দেশ ও জাতির বড় রকমের ক্ষতি হবে। তাই তারা লিখেন, বেঁচে থাকেন, টিকে থাকেন দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করেন। অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারিও করেন, জাতিকে ছবকও দেন, একই সঙ্গে বিদেশি বই বা ছায়াছবির কাহিনী নকল করে, বিদেশি গবেষণা, প্রবন্ধ নিবন্ধ নকল বা চুরি করে দেদারছে ছাপিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আছেন পদক পাবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট বলতেও লজ্জা বোধ করেন না।
‘আমি জীবনে কোনদিন লেখক বা কবি হতে চাইনি। তাহলে তো প্রশ্নটি আরো জোরালো হয়, তবে কেন আমি লিখি? পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের জীবনে ছোট হোক বড় হোক কিছু একটা কাহিনী বা গল্প থাকে। আমার জীবনেও গল্প ছিলো এবং আছে। ‘প্রথমা’ আমার বাস্তব জীবনের গল্পের নায়িকা। প্রথমাই আমার লেখালেখির উৎস, আমার লেখালেখির মূল চালিকাশক্তি। কবি বা লেখক হতে চাইনি, কিংবা হতে পারিনি কিন্তু আমার কলম যতটুকু চলে তার মুল উৎস এবং প্রেরণা আমার প্রথমা। আমার এ কাব্যগ্রন্থটিতে আমার প্রথমাকে চিত্রায়ন করেছি। একজন পাঠক সামান্য একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই আমার প্রথমার দেখা পেয়ে যেতে পারেন আমার এই কাব্যগ্রন্থে। প্রথমাকে নিয়ে আমার লেখা শুরু এবং সেখান থেকেই আস্তে আস্তে লেখা আমার নেশা হয়ে দাঁড়ায়। আমি এখন একটু সময় পেলেই লিখি। মনে কষ্ট পেলেই লিখি। মনে আনন্দে দোলা দিলেই লিখি। মানুষের কোন দুঃখ দুর্দশা দেখলেই লিখি। কোনো অন্যায় হলেই প্রতিবাদ করার জন্যে লিখি। কোনো ভালো কাজের প্রশংসার জন্য লিখি। যে প্রেম ভালোবাসার জন্য বিধাতা এই ধরণী সৃষ্টি করেছেন সেই প্রেম ভালোবাসা নিয়ে লিখি। বিরহ নিয়ে লিখি। আমার এই ‘প্রথমা’ কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছি বিশেষ করে তাঁদের জন্যে, যারা তার প্রিয় মানুষ্টিকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসে। আমার এ কবিতা যদি কারো কাছে একটু হলেও ভালো লাগে তাহলে আমি ধন্য হবো, স্বার্থক হবে আমার লেখনি।
উৎসর্গঃ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু, শ্রেষ্ঠ উপহার, আমার পিঞ্জিরার পাখি প্রথমাকে।